Search The Blog

Thursday, April 7, 2022

কালচারাল শক - সাংস্কৃতিক ধাক্কা (জার্মানি) - পার্ট ০২

প্রথম পর্বে কিছু Cultural Shock নিয়ে লিখেছিলাম। আজকের পর্বে আরো কিছু বিষয় নিয়ে লিখতে বসলাম। 

১.

আমাদের দেশে সাধারণত যেসব জিনিস একটু পুরাতন হয়ে যায় সেগুলো পরিচিত কাউকে অথবা বাসায় ভিক্ষুক আসলে আমরা দিয়ে দেই। কারণ আমাদের আশেপাশেই অনেক দরিদ্র মানুষ আছে যাদের হয়তো পুরনো এই জিনিসপত্র প্রয়োজন। জার্মানিতেও পুরনো জিনিসপত্র যাদের প্রয়োজন তাদের দিয়ে দেয়া হয়। তবে একটু ভিন্নভাবে। সাধারণত যেসব জিনিসপত্র একটু পুরাতন হয়ে যায় কিন্তু ব্যবহারযোগ্য সেগুলো ফুটপাতের পাশে রেখে দেয়া হয়। যাদের প্রয়োজন তারা সেগুলো নিয়ে নিতে পারে। যেমনঃ আসবাবপত্র, রান্নাঘরের থালা-বাসন, বইপত্রচেয়ার-টেবিল, ইলেকট্রনিক্স বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইত্যাদি। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় Free Your Stuff (City Name) নামে বিভিন্ন গ্রুপ আছে যেখানে নিয়মিত Give or Need দিয়ে পোস্ট দেয়া হয়। আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা হয়তো সেখানে পেয়ে যাবেন। সুতরাং কিছুদিন ধৈর্য্য ধরে থাকলে এবং আশেপাশে একটু নজর রাখলেই আপনি আপনার পুরো বাসা এই আসবাবপত্র দিয়েই সাজিয়ে ফেলতে পারবেন।



২.

জার্মানিতে প্রথম যেদিন বাসায় এসে উঠলাম সেদিন আমার রুমমেট আমাকে এক বক্স মিনারেল ওয়াটার দেয়। তবে মজার বিষয় হলো এই পানির স্বাদ একটু ঝাঁঝালো অর্থাৎ আমাদের দেশে সফট ড্রিংক্স এর মত একটু ঝাঁজ আরকি। এটাকে Sparkling Water বা জার্মান ভাষায় Das Sprudelwasser বলা হয়এটা এক ধরণের Carbonated Drink এবং জার্মানিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নন-এলকোহলিক পানীয়! আমদের দেশে আপনি চাইলেই যেকোনো হোটেলে ঢুঁকে ফ্রিতে এক গ্লাস পানি খেয়ে আসতে পারবেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখানে হোটেলগুলোতে ফ্রিতে আপনি পানি পাবেন না। তাছাড়া আপনি যদি পানি কিনে পান করতেই চান তাহলে আপনাকে বলতে হবে "Stilles Wasser" দিতে। নইলে আপনাকে এদেশের কমন পানীয় Sparkling Water ধরিয়ে দেবে যেটা প্রথম প্রথম পান করে আপনার হয়তো ভাল নাও লাগতে পারে।

৩.

অনেক চিঠি! আমাদের দেশ ডিজিটাল হওয়ার পর শেষ কবে আপনি চিঠি পেয়েছিলেন মনে আছে? প্রেমিক/প্রেমিকার চিঠি নয়! ওগুলো তো আছেই। জার্মানিতে আসলে আপনাকে সবাই চিঠি দেবে। যেমন ব্যাংক, হেলথ ইনস্যুরেন্স বা সিটি অফিস ইত্যাদি থেকে। প্রথম প্রথম ভালই লাগবে কিন্তু যখন একগাদা চিঠি জমা হয়ে যাবে তখন হয়তো আপনি একটু বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন বিরক্ত হোন আর না হোন চিঠি আপনাকে পেতেই হবে। অতএব নিয়মিত আপনার মেইল বক্স চেক করতে ভুলবেন না।



৪.

বাংলাদেশে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরতে হয়। কিন্তু আমি বেশ কিছু স্কুল ঘুরে লক্ষ করেছি যে জার্মানিতে স্কুলগুলোতে কোনো ইউনিফর্ম নাই। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বে নাত্সি বাহিনী স্কুল ড্রেস পরিধান বাধ্যতামূলক করেছিল সেজন্য যুদ্ধের পর থেকে জার্মানিতে স্কুল ড্রেস পরিধান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে আমার মনে হয় স্কুলে সবার একই ইউনিফর্ম থাকলে অনেক সুন্দর দেখায়।   

একবার ভেবে দেখুন তো আমাদের দেশে বাসে একটা সিট ফাঁকা রয়েছে কেউ কি তখন দাঁড়িয়ে থাকবে? হয়তো গুটি কয়েক মানুষ থাকবে কিন্তু জার্মানিতে বাসে, ট্রামে অথবা ট্রেনে সিট ফাঁকা থাকলেও কেউ অন্যের পাশে সচরাচর বসে না। হয়তো একজনের গা-ঘেঁষে অন্যজন বসতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। They simply love to respect others privacy.  তবে দূরের ভ্রমণ হলে ভিন্ন কথা।

বাঙালি রান্নবান্না জগৎবিখ্যাত। ভারী মশলাপাতি দিয়ে সকাল-দুপুর-রাতে পেট ভরে না খেলে কেমন যেন তৃপ্তি মেলে না। তবে জার্মানরা এদিক থেকে একটু অন্য রকম। তাদের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল পাউরুটি, ফলমূল, ড্রিংক্স, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি থাকে। রান্না-বান্নার জন্য তাদের খুব বেশি চুলা জ্বালাতে হয় না। আমি আমার রুমমেটকে শেষ কবে চুলায় আগুণ ধরাতে দেখেছি মনে নেই।

৭. 

জার্মানিতে লিঙ্গ বৈষম্য নেই বললেই চলে। এখানে নারী-পুরুষ সবাই একসাথে কাজ করে। প্রত্যেকটি অফিস, শপ বা রেস্টুরেন্টে মেয়েরা কাজ করে। তাছাড়া এখানে LGBTQ+ মানুষেরাও বেশ স্বাধীনতা নিয়ে বসবাস করে এবং ২০১৭ সাল থেকে 'Bill for the legalisation of same-sex marriage' পাস হওয়ার পর একই লিঙ্গের দুজন ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। 

৮. 

স্মোক ডিটেক্টর! আহ! প্রত্যেক ফ্লাটের প্রায় প্রতিটি রুমে স্মোক ডিটেক্টর আছে। অর্থাৎ ঘরে যদি আগুণ লেগে ধোঁয়া উড়ে তখন সেটা দ্রুত সনাক্ত করে সাইরেন শুরু হয়। আমি একদিন চুলায় ভাত বসিয়ে পড়তে বসেছিলাম। হঠাৎ করে সাইরেন বাজতে শুরু করলো। আমি তখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। একটু পরই দেখলাম বাড়িওয়ালা এসে একটা গুতা দিয়ে সাইরেন বন্ধ করে দিল। আমি কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম সেদিন! দীর্ঘ সময় সাইরেন বাজলে ফায়ার সার্ভিসের লোক চলে আসবে এবং আপনাকে অসাবধানতার কারণে জরিমানাও করতে পারে। সুতরাং সাবধান!  



৯. 

স্মোক ডিটেক্টরের কথা বলতেই সিগারেটের কথা মনে পরে গেল। যারা ধুমপান করেন তারা বাংলাদেশে চাইলে একটা স্টিক খরিদ করতে পারেন কিন্তু জার্মানিতে আপনি না চাইলেও পুরো প্যাকেট আপনাকে কিনতে হবে। টং এ বসে চায়ের সাথে একটা সিগারেট - ধূমপায়ীদের কাছে যেন স্বপ্ন! (ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর)   

১০. 

আমাদের দেশে কালেভাদ্রে হয়তো এক-দুই জন বিদেশির দেখা মেলে। কিন্তু জার্মানি উন্নত রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে ছোট্ট শহরেই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষজনের দেখা মেলে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র লক্ষণীয়। আমার কাছে বেশ ভাল লাগে এই বৈচিত্র!